ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ’২০পেলেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় চিত্রনায়ক এমএ আলমগীর এবংচলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শামীম আলম দীপেন

0
682

দেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার পথিকৃত ও প্রথম চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘সিনেমা’র সম্পাদক, প্রথম শিশু চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পরিচালক চলচ্চিত্র সাংবাদিক ফজলুল হক এর নামে প্রবর্তিত ‘ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার ’২০ প্রদান করা হয় ২৬ অক্টোবর। চ্যানেল আই স্টুডিওতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছর এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে চলচ্চিত্র পরিচালনায় চিত্রনায়ক এমএ আলমগীর এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতায় শামীম আলম দীপেন-কে। পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা,সম্মাননা পত্র ও ক্রেস্ট। পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে উত্তরীয়, ক্রেস্ট, সদন ও অর্থমূল্য তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফ।

পুরস্কার গ্রহণ করে চিত্রনায়ক ও চিত্র পরিচালক আলমগীর বলেন, অনেকেই জানেন না আমি চলচ্চিত্র পরিচালনা করি। চ্যানেল আইকে ধন্যবাদ আমাকে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছে কিন্তু, এ পুরস্কারটি আমার জন্য বিরাট স্মৃতি। আমি সকলের আর্শিবাদ চাই যতদিন বেঁচে থাকবো অভিনয়ওকরবো এবং চলচ্চিত্রও বানাবো। এর আগে ফজলুল হকের উপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় ফজলুল হকের প্রতি স্মৃতিচারণ করেন মেয়ে কেকা ফেরদৌসী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে স্মৃতিচারণ করেছেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব শফিউজ্জামান খান লোদী, ‘আনন্দআলো’ সম্পাদক রেজানুর রহমান, সাবেক ‘প্রিয়জন’ সম্পাদক আবদুর রহমান প্রমুখ। প্রয়াত ফজলুল হক স্মরণে ২০০৪ সাল থেকে এই পুরস্কারপ্রবর্তন করেন বিশিষ্ট কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুন। ২০০৪ থেকে প্রবর্তিত এই পুরষ্কার ইতিমধ্যে পেয়েছেন ফজলশাহাবুদ্দীন, আহমদ জামান চৌধুরী, চাষী নজরুল ইসলাম, হুমায়ূনআহমেদ, সাইদুল আনাম টুটুল, রফিকুজ্জামান, সুভাষ দত্ত, হীরেন দে,আবদুর রহমান, গোলাম রাব্বানী বিপব, সৈয়দ শামসুল হক, আমজাদ হোসেন, চিন্ময় মুৎসুদ্দী, মোরশেদুল ইসলাম, ই আর খান, অনুপম হায়াৎ,নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, গোলাম সারওয়ার, নায়ক রাজ রাজ্জাক, রেজানুর রহমান, সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী, আরেফিন বাদল, মাসুদ পারভেজ, শহীদুল হক খান, আজিজুর রহমান, মোস্তফা জব্বার, আবদুল লতিফ বাচ্চু, নরেশভুঁইয়া, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, শফিউজ্জামান খান লোদী, কোহিনূর আক্তার সুচন্দা ও রাফি হোসেন।


ফজলুল হক প্রাক কথন

ফজলুল হক ছিলেন এ দেশের প্রথম সিনেমা-পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ওপ্রকাশক। পঞ্চাশের দশকে এদেশে সিনেমা শিল্পের যাত্রা শুরুর আগেই সিনে সাংবাদিকতা বা চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশ রীতিমতো দুঃসাহসিককাজ ছিল। এখনকার চলচ্চিত্র শিল্প বা অসংখ্য পত্র-পত্রিকার যুগে সেই সময়েরএই উদ্যোগ সম্পর্কে কল্পনা করাও কষ্টকর। ফজলুল হক সেই অসাধ্য কাজটি করেছিলেন। সেই দিক থেকে ফজলুল হককে এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার জনক বলা যায়।১৯৫০ সালে বগুড়া থেকে সিনেমা পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে প্রকাশনা ঢাকায় স্থানান্তর হয়। পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো ২,এসি রায় রোড ঢাকা থেকে। সর্বশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে ১৯৫৯সালে। তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত মানসম্পন্ন ও জনপ্রিয় পত্রিকা সিনেমা। ষাটের দশকের শুরুতে ফজলুল হক ‘প্রেসিডেন্ট’ নামে একটি শিশুতোষ সিনেমা তৈরি করেছিলেন। সিনেমাটি পাকিস্তান আমলে পুরষ্কৃতও হয়েছিল। অনেকে হয়তো জানেন না, ‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিতে শিশু নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে পুরষ্কৃত হয়েছিলেন আজকের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর।‘প্রেসিডেন্ট’ ছবিটি যখন নির্মিত হয় তখন ঢাকায় প্রযোজিত সিনেমার সংখ্যা মাত্র কয়েকটি। পরে তিনি ‘উত্তরণ’ নামে আরো একটি সিনেমা পরিচালনা করেন। পত্রিকা সম্পাদনা বা চলচ্চিত্র পরিচালনা কোনোটাতেই তিনি থেমে থাকেননি। পরে অন্যান্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এক সময় তিনি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যান। এদেশের চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণের একেবারে সূচনা পর্বে ফজলুল হকের অবদান স্মরণীয়। তাঁর অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য ‘ফজলুল হক স্মৃতি কমিটি’ প্রতি বছর একজন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও সেরা চলচ্চিত্রের পরিচালককে পুরষ্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন চলচ্চিত্রের এই গুণী মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানাতে তাদের একটি মূল মিলনায়তনের নামকরণ করেছে ‘ফজলুল হক স্মৃতি মিলনায়তন’। চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহীদের জন্য সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ফজলুল হক ইন্সটিটিউট অব মিডিয়া স্টাডিজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বিশিষ্ট কথা শিল্পী রাবেয়া খাতুন তার সহধর্মিণী। জ্যেষ্ঠপুত্র ফরিদুর রেজা সাগর বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লি., চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ছোট ছেলে ফরহাদুর রেজা প্রবাল বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী স্থপতি, বড় মেয়ে কেকা ফেরদৌসী বিশিষ্ট রন্ধনবিদ ও ছোট মেয়ে ফারহানা মাহমুদ কাকলী গৃহিনী।

আলমগীর চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক কিংবদন্তীর নাম। নায়ক, গায়ক,পরিচালক, প্রযোজক ও দক্ষ সংগঠক। বউমা, নিষ্পাপ, নির্মম, মায়ের আশীর্বাদ (কলকাতা) ও একটি সিনেমার গল্প নামে ৫টি বহুল আলোচিত সিনেমার পরিচালক তিনি। দীর্ঘ ৪৮ বছরের অভিনয় জীবনে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক লাইফটাইম এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি ‘বাচসাস’ কর্তৃক তাকে লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। ১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’, ১৯৮৭ সালে ‘অপেক্ষা’, ১৯৮৯ সালে ‘ক্ষতিপূরণ’, ১৯৯০ সালে ‘মরণের পরে’, ১৯৯১ সালে ‘পিতা মাতা সন্তান’, ১৯৯২ সালে ‘অন্ধ বিশ্বাস’, ১৯৯৪ সালে ‘দেশপ্রেমিক’ ছবিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার স্বীকৃতি হিসেবে সাত বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১০ সালে ‘জীবন মরণের সাথী’ ও ২০১১ সালে ‘কে আপনকে পর’ ছবিতে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পার্শ্বচরিত্রে) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। দেশের বাইরেও একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন আলমগীর। ১৯৯৩ সালে কলকাতায় তাকে ‘উত্তম কুমার অ্যাওয়ার্ড’, ১৯৯৪ সালে ‘কালাকারঅ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশন থেকেও তাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

শামীম আলম দীপেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক শামীম আলম দীপেন মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার শিমুলিয়া গ্রামে ১৯৫৭ সালে ২৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম দেওয়ান আব্দুল গনি সরকারি চাকরি করতেন। মাতা মরহুমা হাসিনা দেওয়ান। ১৯৮৫ সালে চলচ্চিত্র সাংবাদিক আখতারুজ্জামানের সিনেমা পত্রিকায় নির্বাহী স¤পাদক হিসেবে যোগদান করলে, তাঁরই আহ্বানে বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে চলচ্চিত্র ও শিল্প সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী শামীম আলম দীপেন যোগদান করেন। পরে তিনি আব্দুর রহমান স¤পাদিত পাক্ষিক প্রিয়জন ও গোলাম কিবরিয়া স¤পাদিত ছায়াচিত্র পত্রিকায় কাজ করেন।‘কলম থেকে ক্যামেরা’- বিনোদন সাংবাদিকতায় নতুন মাত্রা যোগ হলে তিনি এবং তার বন্ধু শফিউজ্জামান খান লোদী ‘স্টার ডায়েরী’ নামে একটি ভিডিও ম্যাগাজিন প্রকাশ ও প্রচার করেন। চ্যানেল আই-এর জন্মলগ্ন থেকেই শামীম আলম দীপেন ও শফিউজ্জামান খান লোদী যুগ্মভাবে সিনেমা বিষয়ক অনুষ্ঠান নির্দেশনা ও প্রযোজনা করে আসছেন। সামাজিক সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সচিব ও মহাসচিব হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বর্তমানে এ সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ও নিরাপদ নিউজ এর বার্তা স¤পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here