বঞ্চিত তৃতীয় বাঙালি আইকন

0
431

মানুষ স্বভাবতই নিঃসঙ্গ নয়। সে সঙ্গপ্রিয়। জীবন আমাদেরকে পরস্পরের কাছাকাছি করে। কাছাকাছির ধরনটা নিবিড় হওয়াকে আমরা বলি বন্ধুত্ব; এ অবস্থার প্রসারণকে বলা হয় ওঠা-বসা-চলাফেরার বলয়; যার বৃহত্তর পর্যায়ের নাম সমাজ। কিন্তু আমরা মরি একা। হয়তো শোকও আমাদের পালন করতে হয় একা একাই।

প্রশংসাত্মক কথা লিখতে গেলেও মূল্যবান কোনো কিছুর ওপর আঘাত দেওয়ার বোধ এসে          যায় : সত্যপরায়ণতার সঙ্গে ক্রমশ সময় অতিক্রমণ করতে থাকা দীর্ঘ কথোপকথন আর কালস্রোতের নানা বাঁক পেরিয়ে কঠিন প্রক্রিয়ার চূড়ান্তে তৈরি হয় আস্থা। প্রণব মুখার্জি, আমার প্রিয় প্রণবদার সঙ্গে আমার পরিচয় যখন আমি কলকাতায় সদ্যোজাত অথচ প্রস্ফুটমান এক দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক। তিনি তখন ছিলেন শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক বলয়ের সিনিয়র তারকা। রাজনৈতিক মতান্তরকে আলাদা রেখে, কিংবা আরও শুদ্ধভাবে বলা চলে, তিনিই আলাদা রাখতেন, বাংলা ভাষার অননুকরণীয় মিষ্টতার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের মেলবন্ধন এগিয়ে নিতে থাকলাম। পরীক্ষাটা এলো ১৯৮৫-এর পরে। প্রণবদা নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আস্থা হারালেন; চলে গেল তাঁর মন্ত্রিত্ব এবং সেই সঙ্গে হারালেন রাজধানীতে পাওয়া বিরাট সরকারি বাংলো- যা ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে ডাঁট দেখানোর চমৎকার এক উপকরণ।

তিনি ছোট একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠলেন; সেখানে ছিল পুজোর জন্য ছোট একটি কামরা। খুব কম লোকই জানেন প্রবণদা কীরকম ধর্মনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাঁর প্রতিটি দিন শুরু হতো পুজো দিয়ে। প্রতি বছরই পুজোয় নানা অনুষ্ঠানে পৌরহিত্য করার জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গে তার জন্মভিটায় যেতেন। তার সেই অনাবাদি বছরগুলোয় আমি ঘন ঘন তার সঙ্গে দেখা করতাম। ওই বছরগুলোয় জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চার জন্য তিনি অনেক ফুরসত পেয়েছিলেন। দ্রুত ওপরে ওঠার কিংবা সকরুণ পতনের কারণ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে জ্যোতিষশাস্ত্র। নিয়তির আচরণ তো সুসমঞ্জস নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here