মেটালের আধুনিক কৃষিযন্ত্র নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো শিবগঞ্জের পরিমল বানু

0
280

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার জানগ্রামের বাসিন্দা পরিমল বানু। নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে তিনি এখন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। কিশোরী বয়সে বধূ হয়ে এসেছিলেন স্বামী মোসলেম মন্ডলের ঘরে। স্বামী নিজের ট্রাক্টর চালিয়ে, জমি চষে আর ঘরের সাথে বসানো চালের মিল চালিয়ে দিব্যি চলছিলেন তারা। সেই সুখও বেশিদিন কপালে থাকেনি পরিমল বানুর। জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোখলেস মন্ডল। পরিমল বানুর কোলে রেখে গেলেন দুই ছেলে দুই মেয়ে। সবাই প্রায় পিঠাপিঠি। স্বামী হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে খড়কুটোর মত ভাসতে লাগলেন পরিমল বানু।

২০০৪ সালে সেই সময়ে স্বামীর পুরানো ট্রাক্টর চালিয়ে কিছু মাস কাটলেও ধারের দেনা-পাওয়ার মারপ্যাঁচে জড়িয়ে সেটাও হাতছাড়া হয় তার। ঋণে কেনা গাড়ির টাকা পরিশোধ না করতে পারার জন্য সেটাও ধরে রাখতে পারছিলেন না তিনি। বড় ছেলে সাগরকে এই সময় দুবাইতে পাঠান কাজ করতে। পরিবারের দিকে তাকিয়ে কিশোর সাগর পাড়ি জমান কষ্টের সেই পথে। এদিকে কোলে তখন ৭ বছর বয়সের আলামিন আর ৪ বছরের ছোট মেয়ে শান্তনা আক্তার।আলামিন ছোট হলেও সেই সময়ে পরিবারের হাল ধরা শুরু করে। পুরানো ট্রাক্টর নিয়েই ছোট্ট আলামিন মাঠে যেতেন। কিন্তু সে অর্থেও সংসার চলছিল না। সাথে আছে সেই ট্রাক্টরটিরও ঋণ। সব ভেবে পরিমল বানু সেটিও বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলেন। বিক্রির টাকা দিয়ে ধার-দেনা শোধ করে বছর ঘুরতেই ২০০৬ সালে স্থানীয় কৃষি অফিসে আবার নতুন ট্রাক্টরের জন্য আবেদন করেন তিনি। নতুন ট্রাক্টর পেয়ে একটু একটু করে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেন তিনি।

তবুও বাধা ছিল নানা রকম। শুরুতে সাধারণ কৃষকরা কাজের জন্য এমন আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করতে চাইতেন না। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারলেন যে মেটালের এই ট্যাফে ট্রাক্টর ব্যবহার করে কম সময়ে জমি চাষাবাদ করা যায়, তখন তারাও আগ্রহী হয়ে ওঠে এই যন্ত্রে। নিজের জমির সাথে সাথে পরিমল বানু গ্রামের আরও কৃষকদের জমি চাষ করতে শুরু করেন। পরিমল বানুর ট্রাক্টর শিবগঞ্জের মাটি পেরিয়ে চষতে শুরু করে টাঙ্গাইল, নাটোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়ার চাষের জমি। দূরদুরান্তের কৃষি পেশার মানুষ কৃষিতে এমন আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার নিয়ে জানতে পরামর্শ নিতে আসেন পরিমল বানুর পরিবারের কাছে।

সাগর মায়ের এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে দেশে ফিরে আসেন। সহযোগী হন মায়ের এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ের। প্রতি দুই বছর পর পর পুরাতন মডেলের ট্রাক্টর বিক্রি করে নতুন ট্রাক্টর কিনেছেন তারা। আশেপাশের গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহারে। ধীরে ধীরে পরিবারে স্বচ্ছলতা এনেছেন পরিমল বানু। বিয়ে দিয়েছেন তিন ছেলেমেয়ের। ছোট মেয়ে স্নাতক করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুঁড়ে ঘরের বদলে এখন হয়েছে ইটের ঘর, নিজের চাষের কিছু জমি, গোয়ালে দুধেল গরু আর জমির ফসলে ভরেছে বাড়ির উঠান। গত ১৫ বছরে এ পর্যন্ত মেটালের আইশার ও ট্যাফে ব্র্যান্ডের মোট ১৪টি ট্রাক্টর কিনেছেন পরিমল বানু। সাথে নিয়েছেন ২টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। ইতিমধ্যে আরও একটি হার্ভেস্টারের জন্য আবেদন করেছেন তিনি।

নিজের সেই অসহায় সময়ের কথা এখনও ভোলেননি পরিমল বানু। কিন্তু মেটালের ট্রাক্টরের মত আধুনিক কৃষিযন্ত্র-ই যেন তাকে নিয়ে গেছে সফলতার শিখরে। আগামীতে দেশের আরও অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে যেতে চান তিনি। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here