সারা বিশ্বের ন্যায় জনবহুল বাংলাদেশেও বর্তমান সময়ে নগর জীবনে স্বস্তিদায়ক তুমুল জনপ্রিয় অ্যাপভিত্তিক রাইড পরিষেবার সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর একতরফা নীতি প্রবর্তনের ফলে পেশাদার চালকদের অ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা কমতে থাকায় বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে রাইড পরিষেবা। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে রাইড পরিষেবার সাথে যুক্ত পেশাদার
শ্রমিক ও ভোক্তা উভয়ই। এই চ্যালেঞ্জসমূহ এবং এই সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে বেসরকারি সংগঠন বাঁচাও রাইড-পরিষেবা ঐক্য পরিষদ আজ ১০ মার্চ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) এর সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। আধুনিক এই যাতায়াত ব্যবস্থাকে হুমকির মুখ থেকে রক্ষা করা ও এর সাথে স¤পৃক্ত কর্মীদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় তদারকি প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাপস পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সঠিক মূল্যায়নের পাশাপাশি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবিতে তারা এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাঁচাও রাইড-পরিষেবা ঐক্য পরিষদ এর আহŸায়ক বেলাল আহমেদ। তিনি বলেন, সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রেরিত নীতিমালায় এই পেশার সাথে জড়িত চালকদের স্বার্থ-সংািশ্লষ্ট বিষয়ে বিশেষ কোন দিকনির্দেশনা না থাকায় এবং অ্যাপস-ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর পরিপূর্ণ তদারকি না থাকায় প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের বাণিজ্যিক মনোভাব প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে একের পর এক শ্রমিকদের স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন পলিসি গ্রহণের মাধ্যমে শ্রমিকদের প্রতি অমানবিক ও অনিশ্চয়তা পূর্ণ কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে একদিকে ছোটবাহন অর্থাৎ মোটরসাইকেলগুলো এই রাইড-শেয়ারিং পরিষেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে প্রাইভেট গাড়িগুলো ও তাদের চালকরা দিন দিন অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে এই পরিষেবা থেকে সরে যাচ্ছে। এতে করে নগর জীবনে স্বস্তিদায়ক এই পরিষেবা গ্রহণকারী গ্রাহকগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন এবং সঠিক সময়ে পরিষেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা এই ধরনের প্রথার বিরুদ্ধে সর্বত্র সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে তিনি আহŸান জানান। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, এই পরিষেবার সাথে সংশ্লিষ্ট চালকদের শ্রমিক স্বীকৃতির মাধ্যমে তাদের সকল ধরনের ন্যায্যতা ফিরিয়ে দেওয়া হলে এই শিল্পটি একটি টেকসই শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যা টেকসই এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ভ‚মিকা পালন করবে। তাই তিনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)র পরিচালকের নিকট বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করার আহŸান জানান এবং অপেশাদার নীতিমালার বাহিরে এই পরিষেবার শ্রমিকদের শ্রমিক স্বীকৃতি প্রদান করে শ্রমিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট পেশাদার নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। সবশেষে, রাইড পরিষেবার চ্যালেঞ্জসমূহ এবং শ্রমিকের প্রতি অন্যায্যতা দূর করতে
সংগঠনের দাবি-
১. অ্যাপ-ভিত্তিক পেশাজীবী চালকদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে পরিষেবার মান অনুযায়ী বর্তমান বাজার মূল্য বিবেচনা করে সর্বনি¤œ মজুরি নির্ধারণ, কর্মের নিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা
নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
২. পেশাদার অ্যাপ-ভিত্তিক চালকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় পাবলিক টয়লেট সম্বলিত পার্কিং প্রদান করতে হবে।
৩. সকল অনৈতিক কমিশন বন্ধসহ রাইড পরিষেবা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়- ব্যয়ের হিসেবের সাথে আমাদের অর্থনৈতিক এবং কাঠামোগত দিক বিবেচনায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কমিশন নির্ধারণ করতে হবে।
৪. প্রতিটি রাইডে যাত্রীর গন্তব্য ও রাইড এর পরিপূর্ণ হিসেব চালক ও যাত্রী উভয়ের অ্যাপেই স্বচ্ছতার সাথে প্রদান করতে হবে।
৫. চালকদের কর্মসময় ও জ্বালানি ব্যয় বিবেচনায় স্বল্প দূরত্বের প্রতিটি রাইড কারের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ৩০০ টাকা, সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলারের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ২০০ টাকা ও বাইকের ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ ১৫০ টাকা নিশ্চিত করতে হবে।