পাঁচ তারকা রেনেসন্স ঢাকা গুলশান হোটেল: ঢাকার আলোকিত রূপ

0
665

হাফিজ রহমান

বাংলাদেশের পাঁচ তারকা হোটেলের ইতিহাসে ‘রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশান’ এক অনন্য বিস্ময়। এ যেন এক আধুনিক স্বপ্নপুরী। রূপকথার স্বপ্নপুরী শুধুই স্বাপ্নিক কিন্তু এ স্বপ্নপুরী চোখে দেখা যায়, অনুভব করা যায়, স্পর্শ করা যায়। ২১১ রুম বিশিষ্ট বিশাল এক পাঁচ তারকা রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশান হোটেল ঐতিহ্যের ঢাকাকে আরো নান্দনিক, আরো আলোকিত ও আকর্ষণীয় করে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক হোটেল ব্র্যান্ড ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের ‘রেনেসন্স্’ বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের দিক থেকে পর্যটন শিল্প খাতকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো। বিশ্ব ঐতিহ্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ সৃষ্টি হলো বাংলাদেশের। বলা যায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিল্প ঐতিহ্য সচেতন মানুষও এখন বাংলাদেশকে আধুনিক দেশ হিসেবে ভাবার সুযোগ পাবে।
এই উন্নতমান পাঁচ তারকা হোটেলের উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও প্রিমিয়ার গ্র“পের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এইচ.বি.এম. ইকবাল। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দেশে এ ধরনের একাধিক হোটেল প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা করছিলেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিগত ৯/১০ বছর ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এ জন্যে তিনি বেছে নিয়েছেন গুলশানের অভিজাত ব্যবসায়িক এলাকাকে। ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর এক আড়ম্বরপূর্ণ আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হোটেলটি উদ্বোধন করা হয়। দেশের উন্নয়ন ধারার উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব ডা. এইচ.বি.এম. ইকবাল এমনই একজন উদ্যোক্তা যিনি যেখানেই হাত স্পর্শ করেন সেখানেই সোনা ফলে। এর আগে তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে দেশ বিস্তৃত তৃতীয় প্রজন্মের বাণিজ্যিক ব্যাংক দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড।
প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও প্রিমিয়ার গ্র“পের চেয়ারম্যান ডা. এইচ. বি. এম. ইকবাল বলেন, ঢাকায় ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের এই আধুনিক সংযোজন আনতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা প্রদানের মাধ্যমে এই শহরে আগত সকল পর্যটকদের জন্যে এটি তীর্থস্থান হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরের জন্যে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্যে আমরা বিগত ৯/১০ বছর ধরে কাজ করেছি। অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছে, আমি বলেছি এটি বাস্তবায়িত হবেই। আজ আমি সত্যিই খুশি যে, হোটেলটি এখন ভালোভাবে চলছে।
ডা. এইচ.বি.এম. ইকবাল আরো বলেন, এই হোটেল নির্মাণে এ গ্র“পের ভাইস চেয়ারপার্সন ডা. মমতাজ, ডিরেক্টর নওরিন ইকবাল, ম্যানেজিং ডিরেক্টর মঈন ইকবাল, ইমরান ইকবাল ও জামাল দিনরাত পরিশ্রম করেছে। তাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। তিনি বলেন, এই হোটেল দেশের অবকাঠামো খাতে এক বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প। তিনি বলেন, আমি খুবই আনন্দিত, আমি বিশ্বাস করি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা প্রদানের মাধ্যমে এ হোটেলটি সুনাম লাভে সক্ষম হয়েছে। প্রিমিয়ার হোটেল ম্যানেজমেন্ট ও রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশান হোটেল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর তারুণ্যে উদ্দীপ্ত মঈন ইকবাল বলেন, আমাদের গ্র“পের চেয়ারম্যান মহোদয়ের উদ্যোগ, পরামর্শ ও আন্তরিক তত্ত্বাবধানের ফলেই এই হোটেলটি করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জানি এ ধরনের হোটেল নির্মাণ কতোটা কষ্টসাধ্য, তার চেয়েও একে ব্যবসা সফল পর্যায়ে উন্নীত করা আরো বেশি কষ্টকর। তিনি বলেন, এ হোটেলটিকে আমরা ভিন্নমাত্রায় সাজিয়েছি। ১৯ তলার এ হোটেলটিতে রয়েছে ২১১টি অত্যাধুনিক রুম। প্রতিটি রুমই আনন্দদায়ক ও বৈচিত্রে পরিপূর্ণ। তিনি বলেন, রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশানের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সংস্কৃতি নতুনরূপে তুলে ধরা হয়েছে। যেটি সমসাময়িক স্টাইল এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সংমিশ্রনে তৈরি করা হয়েছে। শাপলা আকার ফুটিয়ে তোলা কার্পেট এবং স্থানীয় হস্তশিল্পের মাধ্যমে প্রস্তুত করা বুননচিত্র রুমগুলোতে বাড়তি আকর্ষণ প্রদান করবে। সুতা এবং গোল্ড থ্রেডের মিশ্রণ ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যাটার্নে নিখুঁতভাবে বোনা জামদানির কাজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। লবি, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য স্থানগুলোর ডিজাইনও দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। যা হোটেলের রূপকে আরো আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ করেছে।
এশিয়ার অন্যতম এই সুন্দর পাঁচ তারকা হোটেলটিতে রয়েছে ৫টি রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে ‘বাহার’ রেস্তোরাঁয় রয়েছে লাইভ কুকিং স্টেশন, যেখানে বুফে নৈশভোজে স্থানীয় থেকে আন্তর্জাতিক সবরকম খাবার পাওয়া যাবে। স্পেশালিটি রেস্টুরেন্স ‘সিয়ার’ রেস্তোরাঁয় আছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খাবারের সংমিশ্রণের অভিজ্ঞতা। রয়েছে সিয়ার বার, এই জ্যাজ বারে পানীয় উপভোগ করা যাবে লাইভ মিউজিকের সাথে। ১৯ তলায় রয়েছে মনোমুগ্ধকর ‘আরবার হল’ এবং পুলসাইড রেস্টুরেন্টে ঢাকার নান্দনিক রূপ প্রত্যক্ষ করার পাশাপাশি খাবার ও পানীয় উপভোগ করা যাবে। এছাড়া হোটেলটির ফরাসি ঘরানার ‘দি গুলশান বেকিং কোম্পানি’তে মিলবে অভিজাত এবং সুস্বাদু বেকারি সামগ্রী ও উন্নত মানের কফি, বিভিন্ন রকমের চা এবং স্যালাড। এর সঙ্গে পাওয়া যাবে স্থানীয় উপাদান থেকে প্রস্তুত করা জিলাটোর বিপুল সম্ভার। ৬ হাজার ৫০০ বর্গফুটেরও বেশি এলাকাজুড়ে অবস্থিত বৈঠক এবং আহারের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা, সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত পরিকাঠামো এ হোটেলকে ঘনিষ্ঠ, ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অনুষ্ঠান সহযোগে বড় মাপের বৈঠক, সম্মেলন এবং বিয়ের আয়োজনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে। অবসর যাপনের অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে এখানে রয়েছে একটি সম্পূর্ণ ফিটনেস সেন্টার, একটি বড় পুল এবং বিলাসবহুল স্পা। দি রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশান হোটেল তাদের সুপরিচিত নেভিগেটর কেয়ারটেকার প্রোগ্রামও চালু করবে। যেখানে অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় হবে স্থানীয় বাছাই করা রত্নদের। এছাড়া এ ব্র্যান্ডের পরিচিত ইভনিং অ্যাট রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশান সেরা সঙ্গীত, শিল্প, খাবার এবং হোটেলে আরো নানা অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।
ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নীরজ গোভিল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের পোর্টফোলিওতে আধুনিক সংযোজন রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশানে ব্যবসার কাজে এবং অবসর সময় কাটাতে আসা উভয় ধরনের আগতদের স্বাগত জানাতে আমরা অপেক্ষায় রয়েছি।
রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশানের জেনারেল ম্যানেজার আজীম শাহ বলেন, ঢাকায় আতিথেয়তার ক্ষেত্রে রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশান হোটেল নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের আকর্ষণ নতুন নৈশভোজের সুবিধা, অবসর সময় কাটানোর নানা সুবিধা এবং অনসাইট নেভিগেটর শহরে অতিথিদের নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করছে। তিনি বলেন, এই হোটেল পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দা উভয়ের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
তিনি আরো বলেন, ছবির মতো সুন্দর নদী, বাঘ এবং চাসহ পর্যটকদের একাধিক আকর্ষণীয় স্থানের সৌজন্যে দক্ষিণ এশিয়ায় রত্নভান্ডার হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। ঢাকার মেট্রোপলিটন সিটিতে বুড়িগঙ্গা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য, লালবাগ ফোর্ড, আহসান মঞ্জিলসহ দেশের সমৃদ্ধশালী ইতিহাসের এক ঝলক পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন। গুলশান এলাকায় রাতের রেনেসন্স্ ঢাকা গুলশানের আলোকিত রূপ সকলকে যেমন মুগ্ধ করছে তেমনি এর আতিথ্যেও মুগ্ধ হচ্ছে অতিথিরা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here