শেখ হাসিনাঃ উন্নয়নের সফল সারথী

বাংলাদেশ এক অমিত সম্ভাবনার দেশ। এটি এখন শুধু কল্পনামিশ্রিত কোনো বাক্য নয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সুদৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে যে মানুষটির অবদান অবিস্মরণীয় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গোপসাগরের পাললিক অববাহিকায় জন্ম নেয়া এই সাহসী মানুষটি নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে এদেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম ও আন্দোলন করেছেন। তিনি ছিলেন অপরাজেয় এক অগ্নিস্ফূলিঙ্গ। পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বকে নাড়া দেয়া হাতে গোনা যে ক’জন নেতার আবির্ভাব হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। বাংলার মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যিনি বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান সান্নিধ্যের সুখদ জীবন ছেড়ে বরণ করে নিয়েছেন জেল-জুলুম, দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন, বন্দুকের গুলিকেও ভয় পাই না, এ দেশের মানুষের জন্যে আমি হাসতে হাসতে মরতে পারি। এ জন্যেই এই সংগ্রামী জননায়ককে এদেশের মানুষ ভালোবেসে স্বীকৃতি দিয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু’ বলে। বঙ্গবন্ধু শুধু দেশের মানুষকে মুক্তির স্বপ্নই দেখেননি, তার নির্দেশিত পথ ধরেই আমরা লাভ করেছি স্বাধীন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পতাকা ও মানচিত্র জাতি হিসেবে আমাদের গৌরব ও অহংকারকে আকাশছোঁয়া সন্তুষ্টি এনে দিয়েছে। কবি অন্নদা শঙ্করের কবিতায় এই ক্ষণজন্মা কিংবদন্তীর কথা এভাবেই উঠে এসেছেÑ
‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার /শেখ মুজিবুর রহমান।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯১৯ সালের ১৭ মার্চ। সে হিসেবে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন। হাজার বচরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখাতেই বাংলাদেশ সরকার এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সে দিক থেকে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২৬ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে মুজিব জন্মশতবর্ষ হিসেবে।’
সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালন উপলক্ষে বছরব্যাপী ব্যাপক উৎসবঘন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা দুর্ভোগের কারণে সেই কর্মসূচি সীমিত আকারে পালনের নির্দেশনা জারি করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে দেশের মানুষকে বিপদমুক্ত রাখতেই ব্যাপক উৎসব উদযাপনের কর্মসূচি স্থগিত করেন। জননেত্রী মনের ভেতর ধারণ করেছেনÑ‘উৎসব বড় নয়, দেশর মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বড় বিষয়।’ তার এই বোধাদয়কে সাধুবাদ।
শেখ হাসিনা যথার্থই একজন অদম্য মনোভাবের গতিশীল নেত্রী। তিনি পিতা বঙ্গবন্ধুর মতই লক্ষ্যে পৌঁছুতে অটল। তিনি সাহসী তিনি অবিচল তাঁর কর্মনৈপুণ্যে। এ জন্যেই তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ বছরের ২৬ মার্চ থেকে দেশে ‘লকডাউন’ জারি করা হয়। এটি ছিল সত্যিই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। লকডাউন মুহূর্তে সরকারের অফিস-আদালতে ভার্চুয়ালি অর্থাৎ অনলাইন চালু থাকে। বিশেষ করে ব্যাংকসমূহ অনলাইনে চালু থাকায় দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। পরবর্তীতে জননেত্রী উপলব্ধি করলেন যে, জীবনের প্রয়োজনেই জীবিকা এবং জীবিকার ব্যবস্থা ব্যতিরেকে জীবন একসময় স্থবির হয়ে পড়বে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাবে, উন্নয়নের গতি ব্যহত হবে। আর এ ধরনের অনিশ্চিত অন্ধকারের কথা চিন্তা করেই তিনি লকডাউন উঠিয়ে দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে অফিস আদালত চালুর উদ্যোগ নিলেন। তিনি করোনায় কর্মহীন হওয়া খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছেন। এমনকি গার্মেন্টস খাতসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছেন। অন্যদিকে শিল্প মালিকরাও স্বল্প সুদে ঋণ পেয়েছে কিংবা ঋণের কিস্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে। এভাবে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার জন্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ অর্থনীতি বোদ্ধাদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শুধু সরকার প্রধান হিসেবে নন, ব্যক্তি জীবনেও অত্যন্ত মানবিক একজন মানুষ। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ আর দরিদ্র দেশের কাতারে থাকবে না, এর উন্নয়ন হবেই। কৃষি ঋণ থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রেই সহযোগিতা প্রদান করেছেন। দারিদ্র্য নিরসনসহ উন্নত বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তার গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্ব কর্তৃকও প্রশংসিত। একথা নিশ্চিত করে বলা যায় মুজিব জন্মশতবর্ষে একজন করোনা যুদ্ধজয়ী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের কাছে সততই জননী জাহ্নবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here