স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: দুর্নীতির ইন্ডাস্ট্রি

শুধু অবাক নয়, স্তম্ভিত হবার মতো ঘটনাই বটে! স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি শাহ মুনীর হোসেনের সরকারি গাড়ির ড্রাইভার আব্দুল মালেক ওরফে বাদলের এর বেশুমার বিত্ত-বৈভবের কথা জেনে দুর্নীতি প্রশ্নে মানুষ এখন আতঙ্কিত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধান বন সংরক্ষক গনি মিয়ার কোটি কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছিল বালিশের মধ্যে। ঘুষের সেই টাকাও হার মেনেছে ড্রাইভার আব্দুল মালেকের সম্পদের কাছে। এ পর্যন্ত তার উদ্ঘাটিত সম্পদের মধ্যে ২৪টি ফ্ল্যাট, ৩টি ভবন এবং একটি ডেইরি ফার্মের সন্ধান পাওয়া গেছে। আরো সন্ধান চলছে।
রূপকথার আলাদীনের জ¦ীনের মতো আব্দুল মালেকের কোনো জ¦ীন নেই যে রাতারাতি এ সম্পদ তৈরি করে দিয়েছে। এসব সম্পদ তিনি করেছেন বেশ সময় ধরেই। তবে তার দৈত্য কিংবা জ¦ীন না থাকলেও তার রয়েছে ‘দুর্নীতির ইন্ডাস্ট্রি’। এ ইন্ডাস্ট্রির সংখ্যা দেশে এখন বেশুমার। যা লোকচক্ষুর আড়ালে। কখনো কখনো যখন এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রির মালিকরা ধরা পড়ে তখন দেশবাসীর চোখ কপালে উঠে যায়!
শুধু স্বাস্থ্য খাতই নয়, দুর্নীতি এখন সরকারের বিভিন্ন খাতে নানা কার্যক্রমেই বিস্তৃতি পেয়েছে। সরকারের চেষ্টা সত্ত্বেও দুর্নীতি থামছে না, বরং বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতির ঘটনা অধিক চাউর হয় প্রতারক সাহেদ এবং ডা. সাবরিনার ঘটনায়। সেই রেশ কমতে না কমতেই সামনে চলে এসেছে সাবেক ডিজি’র ড্রাইভারের দুর্নীতির উদ্ঘাটনে।
এর আগেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেহাল দশা ও নানা অনিয়ম নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের অনেক ঘটনাই জানা। এটিও জানা যে, সরকারি হাসপাতাল সমূহের জন্যে সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে সরবরাহকৃত ওষুদের অর্ধেকই বিক্রি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যায়নি বা এখনো যাচ্ছে না। এর মূল কারণ, সর্বত্রই এখন দলীয় ব্যানারের দৌরাত্ব চলছে। একসময় ব্যাংকগুলোতে ‘সিবিএ’র দৌরাত্ম’র দেখা মিলতোÑএখন তা নেই। এখন দেশে অফিসে অফিসে যা চলছে তা হচ্ছে দলীয় দৌরাত্ম।
সকল অফিস আদালতেই এই দৌরাত্মের প্রভাব স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোনো দুর্নীতি অনিয়মের ঘটনা ঘটলে তার কোনো বিচার বা সুরাহা হয় না। বিচারের আগেই দলীয় দৌরাত্মে তা চাপা পড়ে যায়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও স্বাধীনতা উত্তর ক্ষমতায় থেকে এই ‘চাটার দল’কে নিয়ে ভীত ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি স্পষ্ট বলেছেন দুর্নীতিবাজ সে যেই হোক ছাড় দেয়া হবে না। আমরাও বিশ^াস করি সরকার দুর্নীতিবাজদের খুঁজে বের করে তাদের যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করবে। এতে করে দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে, প্রতিষ্ঠা পাবে সুশাসন। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ হলে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাখাতে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত হবে বলে আমরা বিশ^াস করি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here