রেজাউদ্দিন স্টালিনঃ এ পোয়েট উইথ দ্য পিপল অ্যান্ড পারপাজ…

#কবি_ও_কবিতা🌿 কবিতা একটি দেশ, কবিতা একটি সাম্রাজ্য, কবিতা একটি জগত। কবিতার দেশে, সাম্রাজ্য বা জগতে প্রবেশাধিকার থাকে প্রায় সবারই। কিন্তু কাব্য রাজ্যের বা সাম্রাজ্যের শাসনভার থাকে কেবল কবির হাতে। কবি সেখানে সম্রাট। কবিতার রাজ্যে ভাব থাকে, ছবি থাকে, স্বপ্ন থাকে, প্রেম বিরহ মিলন থাকে, সংগ্রাম থাকে দ্রোহ থাকে, থাকে পরাক্রমের কাহিনী। হিংসা-ক্রুরতা পরাজয়ও যে থাকে না কখনো কখনো সে রাজ্যে তা নয়। স্বভাবতই, কবিতা রাজ্য বা কাব্য সাম্রাজ্যের অধিপতি কবিকে তাই অসীম যোগ্যতাসম্পন্ন একজন হতে হয়। স্বপ্ন রচনায় কবি হন সৃজনবেদনাবিধুর, স্বপ্নের ছবিটি আঁকায় কবিকে হতে হয় শিল্পী। ভাব এবং বাস্তবতার মেলবন্ধনের কারিগর হতে হয় কবিকে। অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতের মালা গাঁথার কাজে কবি হন ত্রিকালজ্ঞ। কবি ইতিহাসের দুরন্ত পরিব্রাজক, কবি হন বর্তমানের চলমান সৈনিক, কবিকেই হতে হয় ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার চক্ষুষ্মান চিত্রকর, তিনি ছবি আঁকেন অক্ষরের বুননে, শব্দের দ্যোতনায় ও বাক্যের ব্যঞ্জনায়। তাই বলেছি যে, ভাষাকে শাসনের, আবেগকে নিয়ন্ত্রনের, স্বপ্নকে বপনের ব্যাপক ক্ষমতার রাজদন্ডটি থাকে, আছে কবির অধীনেই।

#প্রতিভা_স্বীকৃতি🌿 রেজাউদ্দিন স্টালিন এমনই সীমাহীন কাব্যরাজ্যের চারুকর। অনেক আগেই আমি স্টালিনের মস্তকে শিরস্ত্রান হিসেবে পরিয়ে দিয়েছি বাংলা কবিতার ‘রাজকুমার কবি’র অভিধা। তার যথাযথ কারণ আছে।রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবি হবার স্বপ্ন, সংগ্রাম-সাধনা-আরাধনা এবং কবি হয়ে ওঠা সবটাই আমার সামনে ঘটেছে, ঘটে চলেছে। এই পুরো পরিক্রমণে আমি ওঁর সাধন-সঙ্গী। নির্মোহ বলতে পারি, বাংলা ভাষার জীবিত কবিদের মধ্যে স্টালিনের মত এমন প্রেমিক-পাঠক দ্বিতীয়টি নেই বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। সর্বভূক পাঠক রেজাউদ্দিন স্টালিন, তবে ওঁর পাঠের বিষয় নির্বাচিত। যা-তা পড়ে সময় ক্ষেপনে স্টালিনকে কখনো আগ্রহী দেখিনি। স্টালিনের কবিতার প্রতিটি শব্দের পিছনে ওঁর কঠোর শ্রমনিষ্ঠা টের পাওয়া যায়। ওঁর প্রতিটি কবিতা আলাদা করে চেনা যায়। স্টালিনের সেসব কবিতা পাঠককে মাটির কাছে নিয়ে যায়, প্রকৃতির কাছে রাখে, সংগ্রামী হতে শেখায়, বিশ্বাসের কাছে নত করে কিন্তু পরাজয়ের কাছে কখনো অবনত করেনা। পাঠকালে সারাটাক্ষণ এক ধরনের স্নিগ্ধ অহংকারের আবেশ ছড়িয়ে দেয় রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা।ইতিহাস, মিথ, বিজ্ঞান, ঐতিহ্য, কবিতার হাজার বছরের পথ চলা তো স্টালিনের প্রধান পাঠ্য বটেই। সর্বশেষ প্রযুক্তির প্রতিও স্টালিনের গভীর আগ্রহ আমাকে বিস্মিত করে বরাবর। সে কারণে রেজাউদ্দিন স্টালিন-এর কবিতা যেমন বর্তমানের হয়ে চিরকালের, একের হয়েও তেমনি সবার। রেজাউদ্দিন স্টালিন তাই বাংলা কাব্য সাহিত্যের সেই বিরল প্রতিভা, যাঁর হাতে রচিত হয়ে চলেছে আধুনিক এপিক। মানুষের ক্রমাগত সংগ্রামের রূপকার, ইতিহাসের চলমান ধারাভাষ্যকার, মিথের বিশ্বস্ত তর্জমাকারী, স্বপ্ন আর আকাংক্ষার নিপুন ভাষ্কর, জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তির আধুনিক গবেষক ও বিশ্বাসের সর্বজনগ্রাহ্য উপস্থাপক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।স্টালিনকে ‘রাজকুমার কবি’ বলার আরও কারণ আছে। রাজকুমার অর্থাৎ তরুণ। তারুণ্য রাজকুমারের প্রধান শক্তি। তারুণ্যের সেই প্রবল শক্তির কারণে অন্যকারও বশ্যতা বা প্রভাবের নিচে তারুণ্য বসত গাঁড়ে না। বাংলা ভাষার গরিষ্ঠ কবিকুল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, আল মাহমুদ, শামসুর রহমান, শক্তি চট্টাপোধ্যায় কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রভাবে সারা জীবন কাব্য রচনা করে চলেন। রেজাউদ্দিন স্টালিন সেই বিরল কবি, যে কারও প্রভাব ছাড়াই চর্চা করে চলেছে তাঁর কাব্য সাধনা। অগ্রজ কবিদের প্রভাব বলয়ে অধিবাস শুধু বাংলা ভাষার কবিদের একার সংকট তা নয়, অস্তিত্বের এ সংকট পৃথিবীর সব ভাষার কবিদেরকেই মোকাবিলা করতে হয়। অধিকাংশের জন্যে সে চ্যালেঞ্জ দুর্লঙ্ঘ্য হলেও বিরল দু’এক জন সে আচ্ছন্নতা মুক্ত হতে পারেন। এই যে প্রভাব ছিন্ন করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার তাড়না; স্টালিনের মধ্যে তা প্রবলভাবে সফল। একেই আমি রাজকুমারের বৈশিষ্ট্য বলে চিহ্নিত করেছি।যে পাঠক স্টালিনকে পড়েছেন বা পড়ছেন তাঁরা ওঁর কবিতার ভাষাভঙ্গি, উপমা-উৎপ্রেক্ষা, ইতিহাসের রেফারেন্স, মিথের আত্মস্থকরণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনায়াস ব্যবহারের নিখুঁত দক্ষতায় যে মুগ্ধ তা আমি হলফ করে বলতে পারি

#প্রত্যাশা🌿 মাঝে মাঝে মনে হয় স্টালিন কী একটু বেশি লিখছে? মনে যখন হয় কিছুটা সত্যতা তো তার আছেই। স্টালিনের কাছে প্রত্যাশা- ও আরেকটু কম লিখুক। অসংখ্য কাব্যগ্রন্থ এবং অন্যান্য প্রকাশনায় ওঁর ঝুলি উপচে পড়ছে। ওঁকে আর প্রতি মুহূর্তে লিখে প্রমাণ করতে হবেনা যে ও কত বড় কবি। বরং জীবনের গভীরতম যে অর্থ, মহত্তর যে উচ্চতা তার প্রতি রেজাউদ্দিন স্টালিন চূড়ান্তভাবে নিষ্ঠ তা-ই দেখতে চাই আমরা।

#স্টালিন_উদযাপন🌿 ২২ নবেম্বর কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের জন্মদিন। কততম জন্মদিন তা জানায় আমার আগ্রহ নেই মোটেই। কবির আবার বয়স হয় কী করে! বিশেষ করে প্রকৃত প্রস্তাবে যিনি কবি তাঁর? কবি বহমান চলমান নদীর মতোন। নদীকে কী কেউ কখনো জিজ্ঞাসা করে-নদী তুমি কতদূর বয়ে চলেছো? তেমনি কবিকে কেউ কেন বয়সের ঘেরে বাঁধতে চাইবে! আমার বিশ্বাস, স্টালিনের ভক্ত-অনুরক্তরা ওঁকে উদযাপন করার অজুহাত বা ছুঁতো খোঁজেন। সেই উদযাপনের তারিখ হিসেবে তাঁরা বেছে নিয়েছেন ২২ নবেম্বরকে। সৃষ্টিমুখর মানুষের জন্যে বয়সের ক্রমবৃদ্ধিশীল সংখ্যা আমার কাছে কিছু ডিজিট ছাড়া আর কোন অর্থ বহন করে না। রেজাউদ্দিন স্টালিনের বয়স হয়েছে বা হচ্ছে এমন অলুক্ষুণে কথা বিশ্বাস করতে যারা আগ্রহী; আমি তাদের দলভুক্ত নই।

#খালাতো_ভাই🌿 বাস্তব বা অ্যাকচুয়াল জগতে দু’জন পুরুষ একে অপরকে ‘খালাতো ভাই’ বলে ডাকে বলে কখনো শুনিনি। আমি আর রেজাউদ্দিন স্টালিন পরষ্পরকে এভাবেই সম্বোধন করি! এর কারণ-আমার মা খাজা সেলিমা খাতুন ও স্টালিনের মা রেবেকা সুলতানা দু’জন যশোর মোমিন গার্লস হাই স্কুল থেকে শুরু করে এম. এম. কলেজ পর্যন্ত সহপাঠী ছিলেন বাল্যবন্ধু হবার কারণে। আপন বোনের চেয়ে কম ছিলেন না তাঁরা। সঙ্গত কারণে আমরা দু’জন, অর্থাৎ স্টালিন ও আমি বেড়ে উঠেছি ‘দুই দেহ এক-প্রাণ-প্রায়’ হিসেবে। দেশের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন যখন আমি বা স্টালিন পরষ্পরকে ‘খালাতো ভাই’ বলে ডেকে উঠি। ভার্চুয়াল জগতে ‘দ্য পেপার চেস’ মুভিতে হিরো জেমস হার্ট ওই চলচ্চিত্রের আরেক চরিত্রকে ‘কাজিন ল্যারি’ বলে সম্বোধন করেছেন। আমরা অবশ্য ‘দ্য পেপার চেস’ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হবার অনেক আগে থেকেই পরস্পরকে খালাতো ভাই বলে সম্বোধন করি! আজ ২২ নবেম্বর আমার সেই ‘কাজিন ল্যারি’ অর্থাৎ প্রিয় ‘খালাতো ভাই’ বাংলা কবিতার রাজকুমার কবি, বাল্যবন্ধু-কাব্যসখা রেজাউদ্দিন স্টালিনের জন্মদিন।

#ভালোবাসা💕 তুই সুদীর্ঘ জীবন বেঁচে থাক স্টালিন, জীবনের মঙ্গল স্পর্শে ধন্য হোক তোর পথচলা, সকল সুখ আর শুভতায় আকন্ঠ ডুবে থাক তুই। আর জেনে রাখ ভাই বন্ধু স্বজন আমার, আমরা তোকে ভালোবাসি, গভীরভাবে ভালবাসি…

© সৈয়দ রানা মুস্তফী • চেয়ারম্যান, অর্থকথা-মাদারল্যান্ড গ্রুপ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here